তিতাস - 'কি চাই?'
কথাটি বলেই আর কোন শব্দ বলতে পারলোনা সে, উল্টোদিকের মুখটি তার অত্যন্ত পরিচিত।
'ভালো আছো ?' বলল রোহিত।
আসলে কেন্দ্র সরকারের জনসংখ্যাগণনা প্রকল্পের কারণে এখানে এসেছি। 'তোমাদের বাড়িতে কতজন আছে ?'
তিতাস বলল, 'তিনজন। আমি, আমার স্বামী এবং আমার ছেলে।'
বলতে বলতে তিতাস লক্ষ্য করল দুপুর রোদে রোহিতের ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে, সেই দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে পড়ল অন্য একটি দুপুরের ঘটনা..
সেদিনও রোহিতের মুখ লাল হয়েছিল শুধুমাত্র রোদের জন্য না সাথে ছিল রাগ। পঁচিশে বৈশাখের দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল সে তিতাসের জন্য কলেজ স্ট্রিটে। কিন্তু তিতাস শাড়ি পড়ে তার সামনে এসে দাঁড়াতেই সেই রাগের আর প্রকাশ ঘটেনি। নিস্পলক দৃষ্টিতে সে দেখছিল তিতাসকে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি তিতাসের।
'কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছি, অনুষ্ঠান বোধহয় শুরু হয়ে গেল চল' বলেই দুজন তাড়াতাড়ি প্রবেশ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে।
এইভাবে প্রায় যখন পাঁচ বছর হতে চলেছিল তাদের সম্পর্ক.. ইতিমধ্যে তিতাস ও রোহিত উভয়েই তাদের সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানিয়েছিল। হঠাৎ একদিন রোহিতের মা তিতাসের বাড়িতে এসে বলেছিলেন, তাদের ইচ্ছে বিবাহের জন্য রোহিত ও তিতাসের কুষ্টি বিচার হোক। কথাটা শুনে বিজ্ঞানের ছাত্রী তিতাস অবাক হয়েছিল। কিন্তু তার থেকেও বেশি হতাশ হয়েছিল যখন এক সপ্তাহ পরে রোহিত জানিয়েছিল, তাদের কোনদিনও বিয়ে করা সম্ভব না। কারণ তাদের কুষ্টি মেলেনি এবং তার বাড়ি থেকে অন্য একটি পাত্রীর সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
রাগে, অভিমানে তারপর আর কোনো কথা বলেনি তিতাস। ঠিক এক মাস পরে কানে এসেছিল রোহিতের বিয়ের খবর। তার কিছুদিন পর তিতাসেরও বিয়ে হয়ে যায়।
এসব স্মৃতি যেন হঠাৎই রোহিতকে দেখে মনে পড়ে যায়।
তিতাস বলল, 'জল খাবে?'
রোহিত বলল, 'না, অনেক বাড়ি যেতে হবে। ভালো থেকো।'
সামান্য বিদায়সূচক হাসি হেসে দরজাটা বন্ধ করে দিল তিতাস। 'ভালো থেকো' কথাটি তিতাসের খুব চেনা হয়ে উঠেছে আজ.. শেষ যেদিন দেখা হয়েছিল তাদের দুজনের, সেদিনও রোহিত ঠিক এই 'ভালো থেকো' কথাটি জানিয়ে গিয়েছিল। আজ আবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটল।