'শাড়ি' বাঙালির পরিচয়ের সাথে মিশে আছে যা এই বাংলার অহংকার। সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীনতম বস্ত্র এই শাড়ি, যার জনপ্রিয়তা আজও আকাশছোঁয়া। এই শাড়ির আবির্ভাব বাংলায় ঠিক কিভাবে ঘটেছিল তা জানা যায় না। তবে এই আবহমানকাল ধরে বাংলার শাড়ির স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুগে যুগে এই শাড়ির পাড়-আঁচল, ধরণ, বোনার ব্যবস্থা ও পরিধানের আদব-কায়দা পরিবর্তন হয়েছে।
১. প্রাচীনকালের গ্রামবাংলায় শাড়ি পরিধান
এই শাড়ি শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃতি 'শাটী' শব্দ থেকে। 'শাটী' শব্দের অর্থ পরিধানের বস্ত্র। ইতিহাসবিদ রমেশ চন্দ্র মজুমদার প্রাচীনকালের পোশাক সম্পর্কে বলেছিলেন, মেয়েরা পায়েের গোছা পর্যন্ত শাড়িি পরতো এবং আধখানা কাপড় উপরে জড়ানো থাকতো। পাল আমলের কিছু ভাস্কর্য থেকে তার অনুমান পাওয়া যায়। তৎকালে সেলাই করা বস্ত্রের রেওয়াজ ছিল না।একটুকরো কাপড়কে পুরুষরা 'ধুতি' এবং মেয়েরা 'শাড়ি' নামে অভিহিত করেছিল। গুপ্তযুগের কিছু নিদর্শনের মধ্যেও শাড়ির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এছাড়া অজন্তা ইলোরা তেও শাড়ির প্রমাণ পাওয়া যায়।
২. প্রাচীন যুগের শাড়ি পরিধানের নিদর্শন
চিত্রঋন - উইকিপিডিয়া
পরবর্তীকালে, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতেও শাড়ি পরিধানের প্রচলন দেখা যায়। মুঘল যুগেও ধীরে ধীরে ভারতীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী 'শাড়ি'র প্রচলন শুরু হয় কিন্তু তাতে কিছু মোগলাই সংযোজন ঘটে। এই মসলিন শাড়ির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
৩. মুঘলযুগে মসলিন শাড়ির পরিধান
এরপর ব্রিটিশদের সংস্পর্শে এসে শাড়ির গুণগতমান তার বুননের কৌশল সর্বোপরি শাড়ি পরিধানের প্রাচীন পদ্ধতির পরিবর্তন দেখা যায়। বাঙালির চিরাচরিত একপ্যাঁচে শাড়ি পরার ধারণাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়, ব্রিটিশ আদব-কায়দা ধীরে ধীরে গ্রহণ করে নেয় নারীসমাজ।
৪. ব্রিটিশ আমলের শাড়ি পরিধানের নতুন ধরন
চিত্রঋণ -উইকিপিডিয়া
এক্ষেত্রে বাংলায় প্রথমে এই চলন শুরু হয় ঠাকুরবড়ি থেকেই। রবীন্দ্রনাথের মেজো ভাই সত্যেন্দ্রনাথের স্ত্রী ছিলেন জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। তিনি প্রথম এই নিয়মে শাড়ি পরতে চাননি। স্বামীর সাথে তিনি ইউরোপের বলয়ের মধ্যে পড়ে তিনি ইংরেজি আদবকায়দা রপ্ত করেছিলেন। এছাড়া তিনি পারসি নারীদের শাড়ি পরার ধরন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নতুন করে শাড়ি পরতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার এই শাড়ি পড়ার ধরণ ব্রাহ্ম সমাজের নারীদের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। তারপর এই শাড়ি পড়ার ধরণের নাম হয় 'ব্রহ্মিকা শাড়ি'। এরপর ধীরে ধীরে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশের নারীরা তা অনুসরণ করে।
৫. জ্ঞানদানন্দিনীর পাশ্চাত্যের অনুকরনের শাড়ি পরিধান
চিত্রঋণ - উইকিপিডিয়া
এরপর উনবিংশ শতকে শাড়ির সুতোর পরিবর্তন হয়। নতুন ধরনের আদব-কায়দা তে সমাজের বিবর্তন ঘটে। সাজপোশাকের নতুন ফ্যাশন শুরু হয়। সুতির পাশাপাশি সিল্কের জনপ্রিয়তা দেখা যায়। এছাড়া মসলিন, জামদানি, জর্জেট, কাতান, সিফন, বেনারসি ইত্যাদির প্রচলন দেখা যায়। যদিও বর্তমানে অন্যান্য যাতায়াতের সুবিধাজনক কিছু পোশাকের উদ্ভবের কারণে নিত্য পরিধানের বস্তু থেকে শাড়ির চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। তবুও উৎসবের মরসুমে আধুনিক তারুণ্যের দল আজও বেছে নেয় তাদের চিরাচরিত পোশাক সেই শাড়িকেই।
৬. বর্তমানে উৎসবের মৌসুমে শাড়ির পরিধান
তথ্যসূত্র:-
১. বাংলা সাহিত্যের পোশাকের ইতিহাস - সুকুমার সেন
২. সাজমহল - জয়িতা দাস।
৩. উইকিপিডিয়া
তথ্যসূত্র:-
১. বাংলা সাহিত্যের পোশাকের ইতিহাস - সুকুমার সেন
২. সাজমহল - জয়িতা দাস।
৩. উইকিপিডিয়া
No comments:
Post a Comment