আজ ভারতের প্রথম নোবেলজয়ী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯ তম জন্মবার্ষিকী। গোটা বিশ্বের কাছে তিনি পরিচিত 'গুরুদেব' নামে। জন্ম-বার্ষিকী উপলক্ষে তার বিষয়ে কিছু অজানা তথ্য জেনে নিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা যাক।
- আমাদের জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথের রচনা। অনেকেই হয়তো জানেন না রবীন্দ্রনাথ শুধু এই দেশের জন্য নয়, আরও দুটি দেশের জন্য জাতীয় সংগীত রচনা করেছিলেন। যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তার জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা'। তবে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত ও যে রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে নেওয়া তা হয়তো অনেকেই জানেন না। শ্রীলংকার খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী আনন্দ সামারাকুন ১৯৩০ সালে বিশ্বভারতী চারুকলা ও সঙ্গীত বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে আসেন। সেখানে তিনি রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য পান রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রিয় ছাত্র আনন্দ সামারাকুন এর জন্য বাংলা ভাষায় 'নমো নমো শ্রীলঙ্কা মাতা' গানটি রচনা করেন এবং সুর দেন। পরবর্তীকালে তিনি ১৯৪০ সালে শ্রীলংকার ফিরে যান এবং সিংহলি ভাষায় অনুবাদ করেন গানটি যার প্রথম লাইন 'নমো নমো মাতা আপা শ্রীলঙ্কা নমো নমো মাতা, সুন্দর শ্রী বরণী'। ১৯৫১ সালে গানটিকে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
১. শ্রীলঙ্কায় কবিশ্রদ্ধা জানিয়ে ছাপা ডাকটিকিট
- রবীন্দ্রনাথের সাথে গান্ধীজীর একটি বিশেষ সম্পর্ক ছিল তা অনেকেই জানেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যে গান্ধীজিকে 'মহাত্মা' নামটি দেন তা অনেকেই জানেন না। এছাড়া, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এর মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক ছিল। ১৯৩০-৩১ সালের মধ্যে এই দুই মহান ব্যক্তিত্ব চারবার সাক্ষাৎ করেন। তারা শুধু একে অপরকে সম্মান করতেন শুধু তাই নয় বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। যেমন হলো, তৎকালীন বিশ্বের পরিস্থিতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও রাজনীতি। তবে, মুখোমুখি সাক্ষাৎ ছাড়াও দুজনের মধ্যে পত্র বিনিময় হয়েছে। রবীন্দ্রনাথকে জার্মান ভাষায় স্বহস্তে লেখা আইনস্টাইনের দুটি চিঠি শান্তিনিকেতনের সংগ্রহশালায় সুরক্ষিত রয়েছে।
২. রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইন এর সাক্ষাৎকার
চিএঋন - Wikipedia
৩. গান্ধীজী ও রবীন্দ্রনাথ এর সাক্ষাৎকার
চিএঋন - Wikipedia
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু সাহিত্যিক হিসেবেই নয় একজন সঙ্গীতকার, নাট্যপরিচালক ও নাট্যকার হিসেবেও যথেষ্ট প্রসিদ্ধ ছিল। তিনি ২ হাজারের বেশি গান লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন। যার অধিকাংশই তার ভ্রমণ থেকে অনুপ্রাণিত। রবি ঠাকুর দেশীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি ইংরেজি এবং স্কটিশ গান শুনতে পছন্দ করতেন। এছাড়া তিনি একাধিক নাটক পরিচালনা করেছেন ঠাকুরবাড়িতে। আবার কখনও কখনও তিনি নাটকে অভিনয় করেছেন যা দর্শক মহলে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
৪. নাট্য অভিনেতা রূপে রবীন্দ্রনাথ
চিএঋন - Wikipedia
- রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের কোন কিছুতেই একঘেয়েমি পছন্দ করতেন না। তাই তিনি বারবার বাড়ি বদল করতেন। শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণ তার এই স্মৃতিতেই ধন্য হয়েছিল। কোণার্ক - শ্যামলী - পুনশ্চ - উদয়ন - উদীচী এই পাঁচটি বাড়ি মিলিয়ে এই গড়ে উঠেছিল উত্তরায়ণ.. তা অনেকে জানলেও কি করে এতগুলি বাড়ির সৃষ্টি হয়েছিল তার তথ্য সকলের জানা নয়। এবারে আমরা তা জেনে নেব -
এরপর কবিগুরু যখন ৬৬ বছর বয়স তখন তিনি 'শ্যামলী' গৃহ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। চন্দননগরে থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ অদ্ভুত এক মাটির বাড়ি দেখেন। সেই বাড়ির কথা মাথায় রেখেই বৈজ্ঞানিক চিন্তা ধারায় করে সৃষ্টি হয় শ্যামলীর। ১৯৩৬ সালে প্রবল বৃষ্টিতে শ্যামলীর ছাদ ধসে পড়ে এবং শ্যামলীর সংস্করণ করা হয়।
শ্যামলীর পর 'পুনশ্চ'। রবীন্দ্রনাথ এক দেওয়ালে আবদ্ধ হয়ে বেশিদিন থাকতে পছন্দ করতেন না। নতুন লেখা তাগিদে তার প্রয়োজন হতো পরিবর্তন, তাই শ্যামলীর পূর্বদিকে আবির্ভাব হলো 'পুনশ্চ'র।
কিন্তু 'উদয়ণ' স্থাপনের পরিকল্পনা করেন রথীন্দ্রনাথ। তিনি যখন ১৯২০ সালের পর সস্ত্রীক শান্তিনিকেতনে বসবাস শুরু করেন তখন ১৯২১ সালে এই নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৩৮ সালে জাপানে রীতিতে সাজানো উদয়ণের কাজ সমাপ্ত হয়।
যথারীতি 'পুনশ্চ' তে কিছুদিন থাকার পর সেখানে আর ভালো লাগে না কবির। তাই এবারে শেষ নির্মাণ ঘটে 'উদীচী'র। রাজস্থানী স্থাপত্যের অনুসরণ লক্ষ্য করা যায় এই বাড়িতে। ৭৮ বছর বয়সে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার আগে কবি এই বাড়িতে বসবাস করতেন। এই ছিল তার শেষ গৃহবদল। জীবনের শেষ সৃষ্টিগুলি এই 'উদিচী'তেই সৃষ্ট।
৫. শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবন
চিএঋন - Wikipedia
আজ পঁচিশে বৈশাখ তাই আমার জানা সামান্য কিছু তথ্য দিয়ে এই অপরিসীম ব্যক্তিত্বের কিছু অজানা তথ্য জানানোর চেষ্টা করলাম মাত্র।
'চলিয়া যাও তখন মনে বাজে-/ চিনি না আমি, তোমারে চিনি না যে।' ---- অচেনা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তথ্যসূত্র উল্লেখ --
- শান্তিনিকেতন চেনা অচেনা - সুমিতেন্দ্র নাথ ঠাকুর
- Wikipedia
চিত্রঋণ ও তথ্যসূত্র দে।
ReplyDelete