যার ক্ষুরধার লেখনী যেন প্রতিটি বিষয়কে মানব সম্মুখে এমন ভাবে তুলে ধরেছে, যা দেখে বলতে হয় - 'যে কথা সকলের অলক্ষ্যে ছিল, যা অন্তরের গোপনেই রয়ে গেল, মুখে এলো না, তা তোমার কলম কেমন করে জানল ? কে তোমায় বলে দিলো আমার স্বপ্নের কথা ?' তিনি ছিলেন এমন এক নক্ষত্র যে মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত অব্যক্ত মুহূর্তগুলিকে নিজ মনে ধারণ করে তা লেখনী দিয়ে অবলীলায় প্রকাশ করে দিতে জানতেন।
শতবর্ষ পরেও বাঙালির অন্যতম গর্বের মানুষটা কোথাও যেন অক্লেশে বলে দিয়ে যাবেন, শতবর্ষ পরেও 'তিনি আছেন', 'তিনি থাকবেন' । যতদিন মানব সভ্যতা বিশ্বজুড়ে বিরাজ করবে, ততদিন বাঙালির মননের শিকড় জুড়ে তিনি বিরাজ করবেন। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ঋদ্ধ করে, সমৃদ্ধ করে, অবাক করে তিনি চিরদিন বাঙালিকে ঋণী করে রাখবেন। যে ঋণের সুদ বাড়বে দিন দিন কিন্তু কোনদিন শোধ হবে না। সেই বাঙালির একান্ত আপন রবিঠাকুরের আজ ১৬০ তম জন্মবার্ষিকী।
ঠিক এমন এক ভোরে, যখন সালটা ছিল ১৮৮৭। সরলা দেবী (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নি) একজোড়া ধুতি - চাদর, একটি ইংরেজি কবিতার বই 'The poems of heine', নিজের হাতে গাঁথা বকুল ফুলের মালা নিয়ে নিঃশব্দে ঢুকে যান রবি মামার ঘরে। ঘুমন্ত কবিকে জাগিয়ে উপহার দিয়ে প্রণাম করেছিলেন। এটি ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনের প্রথম জন্মদিন পালন ঠাকুরবাড়িতে।
এরপর কবির জীবনে বহুবার জন্মদিনের উৎসব ফিরে এসেছে। বলাবাহুল্য তিনি তাতে উৎসাহিত হতেন। কবির ৫০ তম জন্মবার্ষিকী শান্তিনিকেতনের আশ্রমবাসী মহাসমারোহে পালন করেছিলেন, তাতে কবি আপ্লুত হয়েছিলেন। এরপর কবির মুকুটে আসে নোবেল পুরস্কার। তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বকবি। তারপর থেকে ধীরে ধীরে আর্জেন্টিনা সহ পশ্চিমের বিভিন্ন দেশ গুলিতে শুরু হয় রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা। যা আজ আরও বিস্তৃতি লাভ করেছে। যদিও বিগত বছর থেকে করোনা পরিস্থিতিতে কোনো উৎসব, অনুষ্ঠান নেই এই পঁচিশে বৈশাখে। কিন্তু এটাও সত্যি রবীন্দ্রনাথকে ভালবাসতে, শ্রদ্ধা জানাতে কোনো বিশেষ উৎসব লাগে না, কোনো বিশেষ দিন লাগে না বাঙালির। তার সাথে প্রতিটি বাঙালির এমনই নিবিড় সম্পর্ক যা জীবন্ত থাকে প্রতিক্ষণে।
তাই এই বিপন্ন সময়ে মননের মাঝেই রবিস্মরণ করবে বাঙালি এবং বিশ্বজুড়ে সঙ্কটের মুখেও ভরসা জাগাবে তার বাণী - 'বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়।'