Friday, May 29, 2020

পঙ্গপালের ইতিবৃত্ত - অর্পণা পাল

করোনা মহামারী - আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পর এবার দেশে পঙ্গপাল বাহিনীর হানা! কিন্তু এই পঙ্গপাল আসলে কি?
                                ১. একটি প্রাপ্ত বয়স্ক পঙ্গপাল
'পঙ্গপাল' শব্দটা শুনে আমাদের প্রথমেই 'সহজ পাঠে'র একটি গল্পের কথা মনে পড়ে - 'পঙ্গপাল না তাড়াতে পারলে এবার কাজে ভঙ্গ দিতে হবে'। এছাড়া পঙ্গপালের ব্যাপারটা কিরূপ, সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা অস্পষ্ট। তার প্রধান কারণ প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার অভাব‌। একসঙ্গে অগণিত পঙ্গপালের আক্রমণ যে কি ভয়াবহরূপ নিতে পারে তা হৃদয়ঙ্গম করা অসম্ভব। টিভির পর্দায় দেখে এই দৃশ্য আমরা ধারণা করতে পারি মাত্র, কিন্তু বাস্তব ঘটনার ভীষণতা উপলব্ধি করতে পারিনা।
                      ২. শহরাঞ্চলে পঙ্গপালের আক্রমণ
এই পঙ্গপাল মূলত একপ্রকার পতঙ্গ। সাধারণত এরা একাই থাকে। কিন্তু অনেক সময়ে এরা সংখ্যায় বেড়ে যায়। তখন তারা দল বেঁধে থাকে। আবার কখনও কখনও মস্তিষ্কে তৈরী হওয়া 'সেরোটোনিন' নামে নিউরোট্রান্সমিটারে এই পতঙ্গের স্বভাব বদলায়। তখন তারা ব্যাপক হারে প্রজনন করে ঝাঁকে ঝাঁকে অন্যত্র পাড়ি দেয়। 
এই পঙ্গপালের ইতিহাস বহু বছরের পুরোনো। প্রাচীন মিশরীয়দের কবরে এই পতঙ্গের ছবি দেখা যায়। এছাড়া প্রাচীন ধর্মগ্ৰন্থ ইলিয়াডেও এই পতঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া বাইবেলের মতো ধমগ্ৰন্থে এই পঙ্গপালের উল্লেখ পাওয়া গেছে। এখানে এই পতঙ্গকে ঈশ্বরের শাস্তিস্বরূপ প্রতিবিধান বলা হয়েছে।
                                   ৩. প্রাচীনকালে উল্লেখিত পঙ্গপালের চিত্র
  পঙ্গপালের আক্রমণ সৃষ্টির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হয়। সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পঙ্গপালেরা স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। এরা কোনো গুল্ম জাতীয়, তৃণভূমি বা শস্য ক্ষেতের মধ্যে প্রবেশ করার পূর্বে ও পরবর্তী অবস্থার মধ্যে বিস্তর পরিবর্তন দেখা যায়। ছোট ঘাসলতার কথা তো ছেড়েই দেওয়া যাক, এরা বড় বৃক্ষকে পত্রহীন করে ফেলতে পারে। ফলে নিমেষের মধ্যেই সবুজ বিস্তীর্ণ ভূমিকে এরা মরুভূমির রূপ দিতে পারে। হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে যাদুবলে কোন স্থানের পরিবর্তন হয়ে গেছে। এর থেকেই পঙ্গপালের শক্তির কিঞ্চিত ধারণা করা যায়। এই পঙ্গপালের আক্রমণ এর পরেই অনেক দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির দৃষ্টান্ত পাওয়া গেছে, আবার অন্যদিকে এই পঙ্গপালকে মানুষ নিজের খাদ্য বানিয়েছে। যা বিশ্বের অনেক দেশেই লোভনীয় খাদ্য।
                                    ৪. খাদ্যরূপে পঙ্গপালের ব্যবহার
 এই বিজ্ঞানের যুগেও পঙ্গপালের উপদ্রবের প্রতিকারের তেমন কোনো কার্যকর পন্থা আবিষ্কৃত হয়নি। ১৯২৮ সালে প্যালেস্টাইন এই পঙ্গপালের আক্রমণে শশ্মান ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। ১৯২৫ সালে মিশরে পঙ্গপালের আক্রমণ হয়েছিল যা কীটবিজ্ঞানীদের দ্বারা কিছুটা আয়ত্তে আনা সম্ভব হয়েছিল। এছাড়া আলজেরিয়া, পারস্য, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়ার বহু স্থানে বছরের পর বছর ধরে পঙ্গপালের উপদ্রব দেখা গেছে। গত ২৫ - ৩০ বছরের মধ্যে আমাদের দেশে এই পঙ্গপালের আক্রমণ তেমনভাবে ঘটেনি। তবে বর্তমানে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাটে এই পঙ্গপালের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
                                     ৫. শস্যক্ষেতে পঙ্গপালের আক্রমণ
 বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জমিতে কীটনাশক ছড়িয়ে, যন্ত্রের সাহায্যে, আগুনের হলকা ছুঁড়ে, জলাশয়ে ফাঁদ পেতে ধরা হয়েছে পঙ্গপালদের। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এর প্রকোপ কমেছে। কিন্তু কম হলেও তা আজও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তারই দৃষ্টান্ত স্বরূপ এই পঙ্গপালের  আক্রমণের একটি ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠতে চলেছে বর্তমানে আমাদের দেশে।
তথ্যসূত্র এবং চিএঋণ :-
উইকিপিডিয়া

2 comments:

Shilajit Resin

Shilajit Resin Tap into your full potential with India’s first clinically researched, purified shilajit resin, sourced from 18,000 feet of t...