Monday, March 30, 2020

বিদেহী

অভয় আজ দুদিন হল অফিসে যায়নি, এভাবে আর ছুটি করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বারবার তাকে অফিস থেকে ফোন করে যাচ্ছে কিছুটা বিরক্ত বোধ করা সত্ত্বেও তাকে প্রতিটি ফোনের উত্তর দিতে হচ্ছে। কোন উপায় নেই, সঞ্জনা তার স্ত্রী প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ কি যে হয়েছে ডাক্তার দেখিয়েও বুঝতে পারা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় নিজেকে অসহায় লাগছে..
যাই হোক, আজ অফিস যেতেই হবে মাসের শেষের দিকে অনেক কাজ থাকে তার। তাই সঞ্জনাকে বলল, 'আজ তুমি একটু ম্যানেজ করে নাও, আবার কাল তোমার কাছে থাকবো।
' সঞ্জনা বললো, 'ঠিক আছে।'
তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে কাজের চাপে ভুলেই গেছে অভয় বাড়িতে ফোন করার কথা। মোবাইলটা হাতে নিতেই অনুশোচনা হলো! প্রায় ছয়, সাত বার ফোন করেছে সঞ্জনা..
 তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফোন করল, কিন্তু ফোনটা সঞ্জনা ধরল না। মনে মনে ভাবল সঞ্জনা রাগ করেছে হয়তো, এমনটাই করে থাকে সব সময়। অফিসে এক সপ্তাহ ছুটি নিল সে। কিন্তু অবাক, অফিস থেকে বেরিয়ে একটু হাঁটতেই দেখলো সঞ্জনা ফোন করছে তাকে। ফোনটা ধরতেই সঞ্জনা জানালো সে তাদের বাড়ি যাওয়ার পথের গলির মোড়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে। ওষুধ কিনতে বেরিয়েছিল হয়তো ভাবল অভয়। গলির মুখে আবছা আলোতে সঞ্জনাকে দেখতে পেল.. দৌড়ে গিয়ে বলল, 'এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? বেরিয়েছো কেন তুমি?'
 সঞ্জনা বলল, 'তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, একা একা ঘরে অন্ধকারে থাকতে ভাল লাগছিল না! তোমায় ফোন করেছিলাম তুমি ধরলে না.. তাই ভাবলাম একটু বেরিয়ে ঘুরে নি বাড়ির চারপাশটা।'
 'ঠিক আছে, ঘরে চলো, কদিনের ছুটি নিয়েছি তোমার জন্য.. তোমাকে নিয়ে একটু ছুটিতে কোথাও বেরিয়ে আসবো।'
'নাগো, এই শরীর নিয়ে আর এখন ঘুরতে যেতে পারবো না! তুমি একাই চলে যেও' বলল সঞ্জনা।
সঞ্জনার শরীর কি খুবই খারাপ.. কেননা কদিন আগেই সঞ্জনা খুব ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছিলো, এসব ভাবতে ভাবতে দরজার কাছে আসলো দুজন। ঠিক সেইসময় সঞ্জনা বলল, 'যাও ঘরে যাও, আমি আসছি। চা নিয়ে..' কথাটা বলার সময় অভয় দেখল সঞ্জনার চোখে এক অন্যরকম যন্ত্রণা ফুটে উঠল। এরকম বেদনায় কাতর হতে কখনো দেখেনি অভয় তাকে..  ঘরে ঢুকে অভয়ের দেহ প্রায় অসাড়তায় ভরে আসতে লাগলো সে দেখল সঞ্জনার নিথর দেহটি বিছানার ওপর পড়ে আছে।
পরদিন চেতনা ফিরতে অভয় জানতে পেরেছিল হৃদরোগজনিত কোন কারনে সঞ্জনার শ্বাসকষ্ট হতো তারই ফলে এই ঘটনা ঘটেছে। ডাক্তার জানায় তার মৃত্যুর সময় ছিল দুপুর দুটো থেকে তিনটের মধ্যে। তখন নিজের ফোনের কল রেকর্ডটা দেখেছিল অভয়.. সঞ্জনা সেদিন তাকে ফোন করেছিলো যখন, তখন ছিল প্রায় বিকেল চারটে।

Tuesday, March 24, 2020

প্রকৃতির প্রতিশোধ

অরিজিৎ অফিসে ছুটি পাওয়ায় ঠিক করল কদিনের জন্য কোথা থেকে বেরিয়ে আসা যায়।যেমন ভাবা তেমন কাজ.. অফিসের কজনকে জুটিয়ে নিল সে। প্রায় পাঁচ, ছয় জন মিলে তারা রওনা দিল সুন্দরবনের দিকে। শহরে এই ইটকাঠের জীবনে কিছুটা হাঁপিয়ে উঠেছিল সে, চাইছিল কিছুটা বিশ্রাম। শুধুমাত্র শারীরিক নয়, দরকার ছিল মানসিক বিশ্রামের। তাই শান্ত স্নিগ্ধ গ্রাম্য জীবনই ছিল একমাত্র কাম্য।
যাইহোক, সেখানে পৌঁছে প্রথমে ঠিক হলো নৌকাতেই তাদের রাত্রি কাটবে কিন্তু পরে সবাই ঠিক করল জঙ্গলে রাত্রি যাপন করবে। কিন্তু অরিজিৎ জানতো না তার সহকর্মীরা শুধুমাত্র বিশ্রামের জন্যই জঙ্গলের শান্ত পরিবেশকে বেছে নেয় নি, তাদের উদ্দেশ্য ছিল অন্য কিছু। সেটা তারা কিছুটা গোপন রেখেছিল অরিজিৎ এর কাছে। মধ্যরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে অরিজিৎ টের পায় এক বন্দুকের শব্দ কিন্তু এই অঞ্চলে প্রায়ই বনবিভাগের লোকজন পাহারা দেয় তাই সে ভাবলো হয়তো সেরকম কিছুই ঘটেছে।
 পরদিন মধ্যাহ্ন ভোজনের ব্যবস্থা তারা নিজেরাই করল বনের মধ্যে। খেতে বসে অরিজিৎ জানতে পারলো তার থালায় যে মাংসপিণ্ড গুলি রয়েছে তা এক হরিণ শাবকের যাকে তার সহকর্মীরা গতরাত্রে হত্যা করেছিল। রাগে ঘৃণায় অরিজিৎ এর প্রায় কান্না এসে পড়েছিল কিন্তু সে প্রতিবাদ করতে পারেনি নিজের প্রমোশনের কথা ভেবে... কিন্তু সেদিনের মধ্যাহ্নভোজন তার সেখানেই সমাপ্ত হয়েছিল।
এই ঘটনার প্রায় ছ মাস কেটে গেছে, হঠাৎ একদিন অরিজিৎ অফিস গিয়ে জানতে পারল তার এক সহকর্মী সঞ্জয়ের মৃত্যুর এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কিডনি রোগে সে কিছুদিন ধরে ভুগছিল, তাই ডাক্তার তাকে অপারেশনের পরামর্শ দেয়। অপারেশনের সময় ডাক্তার জানায় তার মৃত্যু ঘটে! কিন্তু পরে জানা যায় কোনো এক অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যুক্ত ছিল সেই ডাক্তার যে সঞ্জয়ের কিডনি অপারেশনের নামে বিদেশে রপ্তানি করে, এর ফলে মৃত্যু ঘটেছে।
হঠাৎই সেইসময় অরিজিৎ এর মনে পড়ে যায় ছয় মাস আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা... আরও মনে পড়ে সঞ্জয় বীরত্বের সাথে সেদিন বলেছিল 'শিকার করাটা এক প্রকার আর্ট, যেটা সবাই পারে না।'
     তখন অরিজিৎ মনে মনে ভাবল, কে কখন কিভাবে কার শিকার হয়ে যায় কেউ তা জানতে পারে না। কিন্তু প্রকৃতি হয়তো এভাবেই প্রতিটি শিকারির প্রতিশোধ নিয়ে নেয়।

Sunday, March 22, 2020

সীমাহীন পথচলা

পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর প্রধান ধর্ম গতিশীলতা। তা সে যে কোন কারনেই হোক, কখনো বাঁচার তাগিদে বা কোন সময় নিজের ইচ্ছেতেই তারা জীবনযাত্রায় পরিবেশের পরিবর্তন করে থাকে। এই পথ চলার সূচনা ঘটেছিল অ্যামিবা থেকে যা এখনো পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান শীল। বিশেষত, এই ধর্ম অধিক পরিমাণে দেখা যায় পাখিদের মধ্যে। শুধুমাত্র বাঁচার তাগিদে র্টান, আলবাট্রাস, পাফিন ইত্যাদি পাখিরা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে উড়ে যায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে এছাড়া লাল কাঁকড়া ও বিভিন্ন কীটপতঙ্গ জীবনযাত্রাতেও এই প্রকার পথ চলা লক্ষ্য করা যায়।
এই পথ চলার সবথেকে উৎকৃষ্ট উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় বর্তমানে মানব সভ্যতা। একসময় আদিম মানব তার এই পথ চলা শুরু করেছিল শুধুমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে, আজ তাদের এই পথ চলা পৃথিবীর মাটি ছেড়ে এগিয়ে গেছে চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহের দিকে । আদিমতা থেকে আধুনিকতা মানব সম্প্রদায়কে এনে দিয়েছে এই পথ চলা। সামনের দিকের আকর্ষনেই মানুষ একদিন পথ চলে ছুয়ে ছিল মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া। এই চলাই প্রতিটি জীবকে দিয়েছে বেঁচে থাকার উদ্দীপনা। বার বার নতুন কিছুর আবিষ্কারের নেশার জন্য প্রতিটি জীব এগিয়ে গেছে অনবরত সামনের দিকে যা মূলত সীমাহীন। 
তাই এই পথ চলা জীবজগতের কোনদিনও শেষ হবে না , অন্যভাবে বলতে গেলে আসলে পথচলা অনিয়ন্ত্রিত এবং অসমাপ্ত।

Wednesday, March 18, 2020

মৃতের সাগর


মৃতের সাগর বলতে আমরা সাধারণত বুঝি মূলত জর্ডান নদীর দক্ষিণ দিকে যে উপসাগর সৃষ্টি হয়েছে তাকে। যেখানে অল্প কিছু ব্যাকট্রিয়া ছাড়া কোন উদ্ভিদ বা প্রাণী জীবিত থাকতে পারে না। কিন্তু শুধুই কি পৃথিবীতে এই একপ্রকার মৃতের সাগর রয়েছে?
আমার কিন্তু কখনোই তা মনে হয়না, এই যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনবরত অনাহারে মারা যাচ্ছে মানুষ। খাদ্যাভাবে চলে যাচ্ছে হাজারো মানুষের প্রাণ এবং এই মৃত্যুর মিছিল ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে সেটা কি মৃত্যুসাগর নয়?
এছাড়া, কিছু মুষ্টিমেয় স্বার্থলোভী লোকের জন্য দেশে দেশে ক্ষমতার অপব্যবহারের যুদ্ধ সৃষ্টি হচ্ছে  যেখানে নিমেষের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে নিষ্পাপ প্রাণ সমূহ। সেই মৃতদেহের দল যেন ধাক্কা মারছে উন্নত মানব সভ্যতার বুকে ক্রমাগত। ঠিক যেমন মৃত সাগরের ধারে আছড়ে পড়ে লবণাক্ত ঢেউ। এই প্রকার মানুষের মৃত্যুর ঢেউ কি একপ্রকার মৃতের সাগর নয়?
পৃথিবীতে এই মৃতের সাগর ভিন্ন ভিন্ন রূপে বিরাজমান। কোথাও তা প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ কোথাও মনুষ্য দ্বারা সৃষ্ট বর্তমানে ক্রমবর্ধমান।

Tuesday, March 17, 2020

অন্তর্দ্বন্দ্ব


                   ‌‌‌ ‌‌‌            অন্তর্দ্বন্দ্ব

ঈশা আবার অফিস থেকে ফিরে এসে শুনতে পেল মা ও ভাইয়ের দ্বন্দ্ব চলছে ঈশা বিয়েতে কি রং এর শাড়ি পড়বে তাই নিয়ে। হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল পাঁচ বছর আগে সে ও তার পুরোনো প্রেমিক এই বিষয়ে বেশ কিছু সময় দ্বন্দ্ব করেছিল তাদের বিয়েতে কে কি রং এর পোশাক পড়বে তাই নিয়ে। কালবিবর্তনে‌ কবেই পিছনে ফেলেছে সেই প্রেমিকের স্মৃতি, মনে মনে ভেবে ঈশা অবাক হলো কারণ দ্বন্দ্ব তখনো ছিল আজও আছে। পার্থক্য শুধু তখন ছিল বর্ণ দ্বন্দ্ব , আজ অন্তর্দ্বন্দ্ব।

Shilajit Resin

Shilajit Resin Tap into your full potential with India’s first clinically researched, purified shilajit resin, sourced from 18,000 feet of t...